বৃহস্পতিবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৩৬ অপরাহ্ন
সরকারবিরোধী দলগুলোকে এক কাতারে এনে এক দফার আন্দোলন ঘোষণার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। একইদিনে দলটির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলোরও পৃথক কর্মসূচি ঘোষণার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে এবারও জামায়াত আলাদা থাকবে।
সূত্রমতে, মধ্য জুলাইয়ে গণআন্দোলনের এক দফার যৌথ ঘোষণা দেওয়া হবে। সেইসঙ্গে ঘোষণা করা হতে পারে রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফার রূপরেখাও। বিএনপি এবং শরিক দল ও জোটগুলো যার যার প্ল্যাটফর্ম থেকে এই দুটি ঘোষণা একত্রে দিতে পারে। আগামী ১০ দিনের মধ্যে পুরোবিষয়টা চূড়ান্ত হয়ে যাবে। এই সময়ের মধ্যে বিএনপির নীতি-নির্ধারকদের দুটি এবং গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে বিএনপির বৈঠক হবে।
বিএনপি সূত্রমতে, ঈদের আগে স্থায়ী কমিটির একাধিক বৈঠক এবং শরিক দল ও জোটগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে একদফা আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি। এক দফার ভিত্তিতে চলতি জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে ফের মাঠে গড়াতে পারে যুগপৎ আন্দোলন। বর্তমান সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্তি ও নির্বাচনকালীন নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থার দাবিই একদফার মূল বিষয়। তবে এর সঙ্গে আরও কয়েকটি দাবিও যুক্ত থাকবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত লাগাতারভাবে এই আন্দোলন চলবে। শোকের মাস আগস্টেও এবার কর্মসূচি থাকবে। কর্মসূচিগুলোকে কিছুটা সময়োপযোগী করা হবে। যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিএনপিই নেতৃত্ব দেবে। বিভিন্ন কর্মসূচি দিয়ে মাঠে কর্মীদের সক্রিয় রাখবে। গণতন্ত্র মঞ্চ রোডমার্চ করেছে, অন্য সমমনা দলগুলোও মিছিল-মিটিং করছে।
জামায়াতে ইসলামী ইতোমধ্যে রাজধানীতে সমাবেশ করেছে। শিগগিরই তারা নতুন কর্মসূচি দেবে। এক দফার ঘোষণা এলে সব দল রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে এবং সারা দেশে একযোগে কর্মসূচি পালন করবে।’
বিএনপি ও গণতন্ত্র মঞ্চের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে আন্দোলনকারী দল ও জোটগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের জন্য গঠিত লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠক রয়েছে। ৫ জুলাই এই বৈঠক হতে পারে। সেখানে আলোচনা করে যুগপৎ আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচি ঠিক হবে। আর জুলাই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের দিকে আন্দোলনের এক দফা ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত রয়েছে বিএনপি ও গণতন্ত্র মঞ্চ। একই সঙ্গে নিজ নিজ প্রস্তাবনা অনুযায়ী ‘যৌথ রূপরেখা’ আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হবে।
একদফা যৌথ ঘোষণায় থাকছে- বর্তমান সরকারের পদত্যাগ ও বর্তমান সংসদের বিলুপ্তি, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন করে তার অধীনে অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা; বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দির মুক্তি, মিথ্যা-গায়েবি মামলা প্রত্যাহার, ফরমায়েশি সাজা বাতিল, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন এবং সংবিধান ও রাষ্ট্রব্যবস্থার গণতান্ত্রিক সংস্কারের মাধ্যমে জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি, ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা।
জানতে চাইলে গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, এক দফার ভিত্তিতে জুলাই মাসের শেষদিকে যুগপৎ আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি শুরু হতে পারে। এর আগে মধ্য জুলাইয়ে একদফা আন্দোলনের ঘোষণা আসতে পারে। একদফা মূলত কমন। এছাড়া রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফা যৌথ ঘোষণাপত্রও থাকবে। দুটি ঘোষণাই একত্রে দেওয়া হতে পারে। একইদিনে যার যার মতো করে এই ঘোষণা দিতে পারে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপির চার সংগঠনের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে আগস্ট মাসে পদযাত্রার কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। তাই আগস্ট মাসে যুগপৎভাবেও কিছু কর্মসূচি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে জাতীয় শোক দিবসের মর্যাদা অক্ষুণ্ন রেখেই সেই কর্মসূচির কথা ভাবা হচ্ছে।
গণতন্ত্র মঞ্চ সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের রূপরেখার মতো গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষ থেকেও ‘সরকার ও শাসনব্যবস্থা বদলের’ ৩১ দফা রূপরেখা দেওয়া হবে। বিএনপির ৩১ দফার সঙ্গে গণতন্ত্র মঞ্চের ৩১ দফায় শব্দগত কিছু পরিবর্তন থাকলেও বেশিরভাগ দফায় মিল থাকবে। তবে উভয়পক্ষের ঘোষণাপত্রই হবে পৃথক। যেসব বিষয়ে মতপার্থক্যের কারণে যৌথ ঘোষণাপত্র হচ্ছে না, সেসব প্রসঙ্গ নিজ নিজ অংশে যোগ করা হবে; অর্থাৎ রাষ্ট্র মেরামতের প্রস্তাব বা প্রতিশ্রুতি তারা যার যার অবস্থান থেকে তুলে ধরবে। তবে কর্মসূচি হবে অভিন্ন একদফার ভিত্তিতে যুগপৎ ধারায়।
জানা গেছে, একদফার ভিত্তিতে চূড়ান্ত আন্দোলনের প্রথম ধাপে আবারও জনসম্পৃক্ত ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি আসবে। কেন্দ্র ও তৃণমূলে ঘুরেফিরে এই কর্মসূচি পালিত হবে। আর আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে কর্মসূচি হবে ঢাকামুখী। সে ক্ষেত্রেও হরতাল-অবরোধ এড়িয়ে ঢাকা ঘেরাও, সচিবালয় ঘেরাও, ঢাকামুখী রোডমার্চ, অবস্থান, বড় সমাবেশের মতো কর্মসূচি আসতে পারে। মূলত জনসাধারণকে ব্যাপকহারে মাঠে নামিয়ে কর্মসূচি সফল করতে চায় বিএনপি।
একদফার আন্দোলনের বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকার পদত্যাগের এক দফার আন্দোলনের ধরন ‘ভিন্ন রকম’ হবে। তারুণ্যে সমাবেশ হচ্ছে, সামনে পদযাত্রার কর্মসূচি শুরু হবে। আমাদের যে ১০ দফা, অন্যান্য যুগপৎ আন্দোলনকারী দলগুলো আছে তাদের দফাগুলো মিলিয়ে একটা দফায় আন্দোলনে যাব। মূলত একটা জায়গায় আসছি সেটা হচ্ছে, এই সরকারের পদত্যাগ।
একই বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘ নিঃস্বার্থভাবে দেশ ও জনগণের জন্য গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে আছি আমরা। সরকারকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা থেকে সরাতে পারলে জনগণই সব সমস্যা সমাধানের পথ তৈরি করবে। আমাদের দফা হবে একটাই।’