বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:২৩ অপরাহ্ন

সরকার ও দল পৃথক নেতা দিয়ে চালানোর পরিকল্পনা

নিজস্ব প্রতিবেদক, নগরকন্ঠ.কম : আওয়ামী লীগের সম্মেলন মানেই নতুন চমক। আগামী ২০-২১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলনে নেতৃত্ব নির্বাচনেও চমক থাকছে। জানা গেছে, সরকার ও দলীয় কার্যক্রম পৃথক নেতা দিয়ে চালানোর পরিকল্পনা নিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। জাতীয় নির্বাচনে বিশাল বিজয়কে সুসংহত, সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে গতি আনা এবং সরকার ও দলের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার লক্ষ্যে এ পরিকল্পনা করা হয়েছে। মন্ত্রিসভা ও দলের পদ, দুই জায়গাতেই আছেন এমন কাউকে কাউকে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা যে কোনো এক জায়গায় রাখার মনোভাব ইতিমধ্যে ব্যক্ত করেছেন।

জানা গেছে, আগামী দিনের বাংলাদেশের রাজনীতি ঘিরে আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী সংগঠন হিসেবে তৈরি করতে চান বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। এ লক্ষ্যে দলীয় কাজ আর সরকারের কাজ যতটুকু সম্ভব আলাদা করার পরিকল্পনা আছে আওয়ামী লীগের। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে গত ৭ জানুয়ারি গঠিত মন্ত্রিসভা নতুন আঙ্গিকে সাজানো হয়েছে। দলের অনেক সিনিয়র নেতা বাদ পড়েছেন। সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং প্রেসিডিয়ামের ১৫ সদস্যের মধ্যে শুধু ড. আব্দুর রাজ্জাক মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পেয়েছেন। চার যুগ্মসাধারণ সম্পাদকদের মধ্যে ডা. দীপু মনি, ৮ সাংগঠনিক সম্পাদকের মধ্যে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, এ কে এম এনামুল হক শামীম ও ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, আইন সম্পাদক শ ম রেজাউল করিম, কার্যনির্বাহী সংসদের দুই সদস্য নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন ও মুন্নুজান সুফিয়ান ঠাঁই পেয়েছেন মন্ত্রিসভায়। সংরক্ষিত নারী আসনের ক্ষেত্রে দলের গুরুত্বপূর্ণ পদধারীদের রাখা হয়নি। আসন্ন জাতীয় কাউন্সিলেও নেতৃত্বে বড়ো পরিবর্তন আনা হবে। যারা মন্ত্রিসভায় থাকবেন তাদের দলের গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হতে পারে। আবার মন্ত্রিসভায় থাকা কাউকে দলীয় গুরুত্বপূর্ণ পদ দিলে পরবর্তীতে তিনি মন্ত্রী থেকে বাদ পড়তে পারেন। জানা গেছে, মন্ত্রিসভায় ও দলে গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা এমন এক নেতাকে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী জিজ্ঞাসাও করেছেন যে, তিনি দলে থাকবেন, নাকি মন্ত্রিসভায়? তখন ঐ নেতা মন্ত্রিসভায় থাকার ইচ্ছা পোষণ করেন। বর্তমান মন্ত্রিসভার ৯ জন সদস্য কেন্দ্রীয় কমিটিতে বিভিন্ন পদে আছেন।

এদিকে এবার সম্মেলনে মূল আকর্ষণ কে হচ্ছেন দলের সাধারণ সম্পাদক? এছাড়া বঙ্গবন্ধু পরিবারের কেউ গুরুত্বপূর্ণ পদে আসছেন কি না, সেই আলোচনাও চলছে সর্বত্র। গত সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও বোন শেখ রেহানা কেন্দ্রীয় কমিটিতে আসতে পারেন বলে আলোচনা ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। এবার তাদের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ হোসেন পুতুলের নাম আলোচনায় আছে। অপরদিকে চলমান শুদ্ধি অভিযানের কারণে কারা বাদ পড়ছেন সেটিও জানার আগ্রহ রয়েছে অনেকের মধ্যে। বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আস্থা অর্জন করেছেন। তবে সরকার ও দলীয় কার্যক্রম পৃথক নেতা দিয়ে চালানো হচ্ছে— এমন গুঞ্জনে সাধারণ সম্পাদক পদটিতে একাধিক সিনিয়র নেতার নাম শোনা যাচ্ছে। এরমধ্যে রয়েছেন তিন জন প্রেসিডিয়াম সদস্য, চার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও একজন সাংগঠনিক সম্পাদক। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি একাধিক অনুষ্ঠানে বলেছেন, কাউন্সিলে সভাপতি পদটি ছাড়া অন্য যে কোনো পদেই পরিবর্তন হতে পারে। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা ছাড়া আমরা কেউই দলের জন্য অপরিহার্য নই। সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী চাইলে দলের দায়িত্ব পালন করব। দায়িত্ব পালনে আমি কোনো চাপের মুখে নেই। আমি শারীরিকভাবেও সুস্থ আছি।’

এদিকে সম্মেলনে প্রাধান্য পাবে নারী নেতৃত্ব। ৩৩ শতাংশ নারী নেতৃত্বের বিষয়ে আগ্রহ রয়েছে হাইকমান্ডের। এরই মধ্যে বিভিন্ন পর্যায়ের অনেক নারী নেত্রীর মাঠে রাজনৈতিক অর্জন, নেতাকর্মীদের কাছে জনপ্রিয়তা, স্বচ্ছ

ভাবমূর্তি ও কার্যক্রম ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত খোঁজ নেয়া হচ্ছে। সরকারি দলের শীর্ষ নেতা ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের মাধ্যমে তাদের সম্পর্কে এসব ‘আমলনামা’ বা প্রতিবেদন সংগ্রহ করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নিষ্ক্রিয়, বিতর্কিত নেতাদের বাদ দিয়ে তরুণ ও পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির নেতারা স্থান পাবেন নতুন কমিটিতে। আর জেলাপর্যায় থেকেও কাউকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান দেওয়া হতে পারে। অনেক দিন ধরে আলোচনায় নেই এবং দলের কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে অতীতে বাদ পড়েছেন—এমন কেউ কেউ প্রেসিডিয়াম বা সম্পাদকমন্ডলীতে স্থান পেতে পারেন।

প্রসঙ্গত, নির্বাচন কমিশনের গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুসারে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিটি পর্যায়ে ৩৩ শতাংশ নারী নেতৃত্ব ২০২০ সালের মধ্যে নিশ্চিত করার কথা রয়েছে। আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটিতে ১৫ জন নারী নেত্রী রয়েছেন। দলের গঠনতন্ত্র অনুসারে ৮১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি হওয়ার কথা থাকলেও বর্তমান কমিটির সদস্যসংখ্যা ৭৭। এ হিসাবে বর্তমান কমিটিতে নারী নেতৃত্বের হার ১৯ শতাংশ। প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেমলন হয় ২০১৬ সালে ২২-২৩ অক্টোবর।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলীয় ফোরামের একাধিক আলোচনায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসাধারণ আত্মত্যাগের ইতিহাস থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ত্যাগের কথা তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষ দল ছাড়ে মন্ত্রিত্বের লোভে। আর জাতির পিতা মন্ত্রিত্ব ছেড়েছিলেন দলকে সংগঠিত করার জন্য। বাংলাদেশের পদলোভী রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রেক্ষাপটে বিরল এই কাজটি বাস্তবিকই করেছিলেন বঙ্গবন্ধু।’ ১৯৫৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হয়ে যুক্তফ্রন্ট সরকারের কৃষি ও বনমন্ত্রী হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এরপর ১৯৫৬ সালে কোয়ালিশন সরকারের মন্ত্রিসভায় শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান তিনি। কিন্তু সংগঠনকে সুসংগঠিত করার উদ্দেশ্যে ১৯৫৭ সালের ৩০ মে বঙ্গবন্ধু মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদটিকে ধরে রেখে মন্ত্রিত্ব ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেন বঙ্গবন্ধু।

২১ ডিসেম্বর নতুন শীর্ষ নেতৃত্ব নির্বাচন

সম্মেলনকে সামনে রেখে উত্সাহ-উদ্দীপনা বেড়েছে নেতাকর্মীদের মধ্যে। যদিও দলটির সিনিয়র নেতারা বলেছেন, ২০২০ সালকে মুজিববর্ষ হিসেবে পালন করা হবে। তাই এবারের জাতীয় সম্মেলন পালন করা হবে সাদামাটাভাবে। আগামী ২০ ডিসেম্বর সকালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে। ত্রিবার্ষিক এ সম্মেলনে সারা দেশ থেকে কাউন্সিলর, ডেলিগেটসহ প্রায় ৫০ হাজার নেতাকর্মী অংশ নিতে পারেন। ২১ ডিসেম্বর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হবে দলের কাউন্সিল অধিবেশন। এ অধিবেশনে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন হবে। দলের সভাপতি পদে গত ৩৮ বছরের মতো এবারও অপ্রতিদ্বন্দ্বী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। তাকে ছাড়া অন্য কাউকে সভাপতি মানবেন না বলেও ইতিমধ্যে দলের জাতীয় কমিটি ও কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি সদস্যরা জানিয়ে দিয়েছেন। সম্মেলনকে ঘিরে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দ্রুত চলছে মঞ্চের কাজ। মঞ্চ যেন পদ্মা নদীর বুকে ভেসে বেড়াচ্ছে একটি বিশাল নৌকা। সেই নৌকার চারপাশ জুড়ে থাকছে প্রমত্ত পদ্মার বিশাল জলরাশি। এর মধ্যে থাকছে স্বপ্নের পদ্মা সেতুও। পদ্মার জলতরঙ্গ, পদ্মার বুকে ঘুরে বেড়ান ছোটো ছোটো নৌকা, এমনকি চরের মধ্যে কাশবনের উপস্থিতিও থাকবে। এর মধ্যে মূল মঞ্চটি হবে ১০২ ফুট দীর্ঘ, ৪০ ফুট প্রশস্ত। আর সামনের পদ্মা সেতুতে থাকবে ৪০টি পিলার।

নগরকন্ঠ.কম/এআর

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2017 Nagarkantha.com